ফরজ গোসলের সঠিক নিয়ম কি

ফরজ গোসলের সঠিক নিয়ম কি? কি কারণে করতে হয়? যা না জানলে আপনার ইবাদতটি ব্যর্থ হতে পারে।
ফরজ গোসলের নিয়ম,ফরজ গোসলের নিয়ম,ফরজ গোসলের নিয়ম ও দোয়া,ফরজ গোসলের সঠিক নিয়ম,ফরজ গোসল করার সঠিক নিয়ম,ফরজ গোসলের নিয়ম ও নিয়ত,ফরজ গোসল,ফরজ গোসলের পদ্ধতি,ফরজ গোসলের সঠিক নিয়ম,গোসলের ফরজ,ফরজ গোসলের নিয়ম জানতে চাই,ফরজ গোসলের নিয়ত,ফরজ গোসলের দোয়া,সুন্নত তরিকায় ফরজ গোসল নিয়ম,ফরজ গোসলের,ফরজ গোসলের নিয়্যাত,ফরজ গোসল করার সঠিক নিয়ম জেনে নিন,ফরজ গোসল করার সঠিক নিয়ম,ফরজ গোসলের নিয়ম সমূহ,ফরজ গোসলের সঠিক নিয়ম কি


🔸১।গোসল করলে কি অযু করা লাগবে? এবং কি কি  কারণে গোসল ফরয হয় ?
🔹২। ফরজ গোসল করার নিয়মটা কি? 
🔸৩।মেয়েদের ফরজ গোসল করার আলাদা নিয়ম আছে কি?


*উত্তরঃ* গোসল হচ্ছে ত্বহারাতুল কুবরা অর্থাৎ বড় পবিত্রতা আর অযু হচ্ছে ত্বহারাতুস সুগরা অর্থাৎ ছোট পবিত্রতা। কেউ যদি শরি'আ সম্পন্ন পদ্ধতিতে গোসল আদায় করে থাকেন তাহলে এ গোসলের মধ্যেই মূলত অযু অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এবং তার আর ভিন্নভাবে অযু করতে হবে না। তবে গোসল যদি শরি'আ মোতাবেক না হয় এবং সেখানে যদি ত্বহারাতের কোনো উদ্দেশ্য বা নিয়ত না থাকে অর্থাৎ এমনিতেই গোসল করা হয়ে থাকে অথবা গরমের কারণে হয়ে থাকে তাহলে তাকে ভিন্নভাবে অযু করতে হবে। কারণ, প্রত্যেকটি 'ইবাদতের জন্যই খাস নিয়ত রয়েছে যার উপর 'ইবাদতটি নির্ভরশীল। অন্তরে নিয়ত বা উদ্দেশ্য থাকার পর গোসলের যেই সুনান এবং ওয়াজিবাত রয়েছে সেগুলো ফলো করে গোসল করা হলে আপনার গোসল সুন্নাহ মোতাবেক হবে। তখন আর আপনাকে ভিন্নভাবে অযু করতে হবে না। ওয়াল্লাহু আ'লাম।

*শাইখ ডঃ আবু বকর জাকারিয়া

কি কি কারণে গোসল ফরয হয়? ফরজ গোসল করার নিয়মটা কি? মেয়েদের ফরজ গোসল করার আলাদা নিয়ম আছে কি?


গোসল ফরয হওয়ার কারণ সমূহ নিম্নরূপঃ


🔹১) স্ত্রী সহবাস। সহবাসের ক্ষেত্রে স্ত্রীর যৌনাঙ্গে পুরুষাঙ্গের সর্বনিম্ন আগাটুকু প্রবেশ করালেই গোসল ফরয হয়ে যাবে। কেননা প্রথমটির ব্যাপারে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “পানি নির্গত হলেই পানি ঢালতে হবে।” অর্থাৎ বীর্যের পানি নির্গত হলেই গোসল করতে হবে। আর দ্বিতীয় কারণের ব্যাপারে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

]إِذَا جَلَسَ بَيْنَ شُعَبِهَا الْأَرْبَعِ ثُمَّ جَهَدَهَا فَقَدْ وَجَبَ الْغَسْلُ[

“স্ত্রীর চার শাখার (দু’হাত দু’পায়ের) মাঝে বসে, তার সাথে সহবাসে লিপ্ত হলেই গোসল ফরয হবে।” যদিও বীর্যপাত না হয়। এ বিষয়টি অনেক মানুষের জানা নেই। অনেক লোক স্ত্রী সহবাসে বীর্যপাত না করলে অজ্ঞতা বশতঃ সপ্তাহ মাস কাটিয়ে দেয় গোসল করে না। এটি মারাত্মক ধরণের ভুল। এ জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের শরীয়তের সীমারেখা সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা প্রত্যেক ব্যক্তির উপর ফরয।
অতএব উল্লেখিত হাদীছের ভিত্তিতে, সহবাস করে বীর্যপাত না হলেও গোসল করা স্বামী-স্ত্রী উভয়ের উপর ফরয।


🔸২) জাগ্রত বা নিদ্রা অবস্থায় উত্তেজনার সাথে বীর্যপাত হওয়া। কিন্তু নিদ্রা অবস্থায় উত্তেজনার অনুভব না হলেও গোসল করা ফরয। কেননা নিদ্রা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে মানুষ অনেক সময় তা বুঝতে পারে না।

🔹৩) নারীদের ঋতু বা নেফাস (সন্তান প্রসোবত্তোর স্রাব) হওয়া। ঋতুবতী নারীর স্রাব বন্ধ হলে, গোসলের মাধ্যমে তাকে পবিত্র হতে হবে। এই গোসলও ফরয গোসলের  অন্তর্ভুক্ত। কেননা আল্লাহ্‌ বলেন,


]يسألونَكَ عَنْ الْمَحِيْضِ قُلْ هُوَ أذىً فَاعْتَزِلُوْا النِّسَاءَ فِيْ الْمَحِيْضِ وَلاَ تَقْرَبُوْهُنَّ حَتَّى يَطْهُرْنَ، فَإِذَا تَطَهَّرْنَ فَأْتُوْهُنَّ مِنْ حَيْثُ أَمَرَكُمُ اللهُ، إنَّ اللهَ يُحِبُّ التَّوَّابِيْنَ وَ يُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِيْنَ[

“তারা তোমার কাছে জিজ্ঞাসা করে হায়েয সমপর্কে। বলে দাও, এটা অপবিত্র। কাজেই তোমরা হায়েয অবস্থায় স্ত্রী মিলন থেকে বিরত থাক। তখন পর্যন্ত তাদের সাথে সহবাসে লিপ্ত হবে না; যতক্ষণ না তারা পবিত্র হয়ে যায়। যখন উত্তমরূপে পরিশুদ্ধ হয়ে যাবে, তখন গমণ কর তাদের কাছে। যেভাবে আল্লাহ্‌ তোমাদেরকে হুকুম দিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহ্‌ তওবাকারী এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের পছন্দ করেন।”  (সূরা বাক্বারা- ২২২)


প্রশ্ন: 🔹ফরজ গোসল করার নিয়মটা কি?


নাপাকীর গোসল করতে হলে গোসলের নিয়ত করে মুসলিম প্রথমে ৩ বার দুইহাত কব্জি পর্যন্ত ধুবে। অতঃপর বাম হাতের উপর পানি ঢেলে দেহের নাপাকী ধুয়ে ফেলবে। তারপর বাম হাতকে মাটি অথবা সাবান দ্বারা ধুয়ে নামাযের জন্য ওযু করার মত পূর্ণ ওযু করবে। অবশ্য গোসলের জায়গা পরিষ্কার না হলে পা দুটি গোসল শেষে ধুয়ে নেবে। ওযুর পর ৩ বার মাথায় পানি ঢেলে ভাল করে চুলগুলো ধোবে, যাতে সমস্ত চুলের গোড়ায় গোড়ায় পানি পৌঁছে যায়। তারপর সারা দেহে ৩ বার পানি ঢেলে ভালরুপে ধুয়ে নেবে। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৪৩৫-৪৩৬ নং)


🔴#মহিলাদের গোসলও পুরুষদের অনুরুপ। অবশ্য মহিলার মাথার চুলে বেণী বাঁধা (চুটি গাঁথা) থাকলে তা খোলা জরুরী নয়। তবে ৩ বার পানি নিয়ে চুলের গোড়া অবশ্যই ধুয়ে নিতে হবে। (বুখারী, মিশকাত ৪৩৮নং) নখে নখপালিশ বা কোন প্রকার পুরু পেন্ট্‌ থাকলে তা তুলে না ফেলা পর্যন্ত গোসল হবে না। পক্ষান্তরে মেহেদী বা আলতা লেগে থাকা অবস্থায় গোসল হয়ে যাবে। কপালে টিপ (?) থাকলে ছাড়িয়ে ফেলে (কপাল) ধুতে হবে। নচেৎ গোসল হবে না।


বীর্যপাত বা সঙ্গম-জনিত নাপাকী ও মাসিকের গোসল, অথবা মাসিক ও ঈদ, অথবা বীর্যপাত বা সঙ্গম-জনিত নাপাকী ও জুমআ বা ঈদের গোসল নিয়ত হলে একবারই যথেষ্ট। পৃথক পৃথক গোসলের দরকার নেই। (ফিকহুস সুন্নাহ্‌ উর্দু ৬০পৃ: দ্র:)


গোসলের পর নামাযের জন্য আর পৃথক ওযুর প্রয়োজন নেই। গোসলের পর ওযু ভাঙ্গার কোন কাজ না করলে গোসলের ওযুতেই নামায হয়ে যাবে। (আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, নাসাঈ, সুনান, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান, মিশকাত ৪৪৫নং)


রোগ-জনিত কারণে যদি কারো লাগাতার বীর্য, মযী, স্রাব বা ইস্তিহাযার খুন ঝরে তবে তার জন্য গোসল ফরয নয়; প্রত্যেক নামাযের জন্য ওযুই যথেষ্ট। এই সকল অবস্থায় নামায মাফ নয়। (আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, মিশকাত ৫৬০-৫৬১ নং)


প্রকাশ যে, গোসল, ওযু বা অন্যান্য কর্মের সময় নিয়ত আরবীতে বা নিজ ভাষায় মুখে উচ্চারণ করা বিদআত।

সতর্কতার বিষয় যে, নাপাকী দূর করার জন্য কেবল গা-ধোয়া বা গা ডুবিয়ে নেওয়া যথেষ্ট নয়। পূর্বে ওযু করে যথানিয়মে গোসল করলে তবেই পূর্ণ গোসল হয়। নচেৎ অনেকের মতে কুল্লি না করলে এবং নাকে পানি না নিলে গোসলই শুদ্ধ হবে না। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ১/৩০৪)
শাইখ আব্দুল হামীদ ফাইযী 


#প্রশ্ন:🔹ফরজ গোসলের শুদ্ধ নিয়ম কি?🔸 #মেয়েদের ফরজ গোসলে আলাদা নিয়ম আছে?
উত্তর:


ফরয সঠিক  গোসলের পদ্ধতি:


🔸১) প্রথমে মনে মনে নিয়ত করবে
🔹২) অতঃপর ‘বিসমিল্লাহ’ বলে দু’হাত কব্জি       পর্যন্ত তিন বার ধৌত করবে।
🔸৩) লজ্জাস্থানে পানি ঢেলে তা পরিস্কার করবে।
🔹৪) অতঃপর পূর্ণরূপে ওযু করবে।
🔹৫) মাথায় পানি ঢেলে আঙ্গুল চালিয়ে চুল খিলাল করবে।
🔸৬) যখন বুঝবে চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছে গেছে তখন মাথায় তিন বার পানি ঢালবে
🔹৭) এবং সমস্ত শরীরে পানি ঢালবে।


- এ ক্ষেত্রে ডান সাইড থেকে কাজ আরম্ভ করবে।


মা আয়েশা (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর গোসলের বর্ণনা এরূপই এসেছে। (বুখারী ও মুসলিম)


*উল্লেখ্য যে, গোসলের ফরয তিনটি। যথা:

(ক) নিয়ত করা।
(খ) নাক ও মুখে পানি দেয়া
(গ) সমস্ত শরীরে পানি প্রবাহিত করা।
উপরোক্ত পদ্ধতি হল পরিপূর্ণ ও সুন্নতী পদ্ধতি। তবে কেউ যদি সুন্নতী পদ্ধতি ফলো না করে কেবল ফরজগুলো আদায় করে তাহলে তা পবিত্র হওয়ার জন্য যথেষ্ট। তবে সুন্নত অনুসরণ করে গোসল করা উত্তম তাতে কোন সন্দেহ নাই।

▪ মহিলাদের মাথার চুলে যদি ঝুঁটি বাধা থাকে তাহলে তা খোলা জরুরি নয়। বরং চুলের গোড়ায় গোড়ায় পানি পৌঁছলেই যথেষ্ট ইনশাআল্লাহ। আল্লাহু আলাম।

If you have any doubts please let me know

Previous Post Next Post